উপমহাদেশের অন্যতম নদী গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকার পলি-মাটি বিধৌত উর্ব্বরভূমি ঈশ্বরদী। ঐতিহাসিক সময়কাল থেকে ঈশ্বরদী একটি প্রতিষ্ঠিত ও গুরুত্বপূর্ন জনপদ হিসাবে পরিচিত ছিল। তৎকালীন বিট্রিশ সরকার এখানে বাংলাদেশের গুরূত্বপূর্ন স্থাপনাগুলো নির্মাণ করেন । বাংলাদেশের বৃহত্তম রেলওয়ে জংশন, উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তর রেলওয়ে ব্রিজ হার্ডিন্জ ব্রিজ ও বিমান বন্দর নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে এ উর্বরভূমিতে এ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকে। এখানে ইক্ষু গবেষনার প্রধান কার্যালয়, ঈশ্বরদী সরকারী কলেজ, নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য মতে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৪৯ খ্রি. তারিখে প্রথমে “ঈশ্বরদী থানা” হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড এবং দায়িত্বাবলি বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৬০ সালে “উন্নয়ন সার্কেল” (আপগ্রেডেড থানা ) হিসাবে পরিচিত লাভ করে। সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে “ঈশ্বরদী উপজেলা” হিসাবে এর নামকরন করা হয়। ঈশ্বরদী উপজেলাটি পাবনা জেলার পশ্চিম পার্শে অবস্থিত। এর উত্তরে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম, ও লালপুর উপজেলা, পশ্চিমে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলা, দক্ষিনে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা এবং পূর্বে পাবনা জেলার পাবনা সদর ও আটঘরিয়া উপজেলা। এ উপজেলার দক্ষিন -পশ্চিম পার্শ্ব দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদী। এ উপজেলাটি 24003 হতে 24015 উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৯0 ০ হতে ৮৯0 ১১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত।
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি ক্ষেত্রে একটি অপার সম্ভাবনাময় উপজেলা হিসাবে ঈশ্বরদী উপজেলা দেশব্যাপী স্বীকৃত। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষিতে বৈচিত্রময় একটি অগ্রগামী উপজেলা। প্রায় সব ফসলই কম বেশী জন্মায়। তবে সবজি (সীম, ঢেঁড়শ, বেগুন, করলা, চাল কুমড়া, ওল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, গাজর) ও ফল বিশেষ করে লিচু , পেঁপে এবং পেয়ারা উৎপাদনের জন্য ঈশ্বরদী উপজেলা বিখ্যাত। এ উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন যথা- ছলিমপুর, সাহাপুর, লক্ষিকুন্ডা ফল ও সবজি আবাদের জন্য প্রসিদ্ধ। দাশুড়িয়া, মুলাডুলি, পৌরসভার আংশিক, পাকশি ইউনিয়নের আংশিক ধান ও সবজীসহ সকল প্রকার ফসলই জন্মে। তবে সাঁড়া ইউনিয়ন সুগারমিলের জন্য আখ এলাকা হিসাবে পরিচিত।
কৃষিতে সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ এ উপজেলা থেকে বেশ কয়েক জন কৃষক-কৃষানী জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কার অর্জন করেছেন। পেঁপে - আলহাজ শাজাহান আলী (পেঁপে বাদশা), কুল- মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ (কুল ময়েজ), নারী উদ্দোক্তা- মোছাঃ নূরুন্নাহার বেগম, লিচু - মোঃ আব্দুল জলিল কিতাব মন্ডল (লিচু কিতাব), গাজর - মোঃ জাহিদুল ইসলাম (গাজর জাহিদ), সবজি- মোছাঃ বেলী বেগম, কপি- মোঃ আব্দুল বারি (কপিবারি) উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সীম, কুমড়া,ওল,বেগুন,ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি ও ফলমূল (কুল, পেয়ারা, লিচু, আম) আবাদে উদীয়মান চাষীর সংখ্যা আগামী দিনে বাড়ছে যারা সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে পৌছবে বলে মনে হয়। বর্তমানে ঈশ্বরদী উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে আরো কয়েকটি ফলের মধ্যে পেয়ারা, মাল্টা, ড্রাগন ও শরীফা আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে চোখে পড়ার মতো। কৃষক পর্যায়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও বিভিন্ন প্রযুক্তির লাগসই ব্যবহারের ব্যাপারে কৃষকের আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিভিন্ন কর্মসূচী/প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকের উন্নয়ন এবং বড় কৃষকদের খামার ভিত্তিক বানিজ্যিক আবাদের কলা-কৌশল বিস্তারে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনে কৃষি ক্ষেত্রে ঈশ্বরদী উপজেলার সুনাম আরো বিস্তৃত হবে এটাই সবার প্রত্যাশা।
বৈচিত্র্যময় ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি সম্ভাবনাময় উপজেলা ঈশ্বরদী। খাদ্যশস্য উৎপাদনের পাশাপাশি তেলজাতীয়, ডাল , মসলা ও উচ্চমূল্য সবজী ও ফল উৎপাদনে এ উপজেলার পরিচিতি রয়েছে দেশব্যাপী। বিশেষ করে গম, সরিষা, মসুর, পেঁয়াজ, শাক সবজী ও ফল চাষ একটি লাভজনক ফসল হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে প্রতি বছর এ সকল ফসলের ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও এ সকল জাতের আবাদ হচ্ছে বিক্ষিপ্তভাবে। কাজেই পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে প্রচলিত ও কম উৎপাদনশীল জাতের পরিবর্তে আধুনিক ও অধিক উৎপাদনশীল, স্বল্প জীবনকাল বিশিষ্ট, স্বল্প সেচ বিশিষ্ট সর্বোপরি স্বল্প উৎপাদন খরচ বিশিষ্ট ফসলের জাত সমূহ প্রতিস্থাপন করে ব্লক আকারে কৃষক গ্রুপের মাধ্যমে ফসল আবাদ সম্প্রসারণ করার বিশেষ উদ্দ্যোগ ঈশ্বরদী উপজেলায় গ্রহন করা হয়েছে।
সম্প্রতি জনাব শাহজাহান আলী বাদশা (পেঁপে বাদশা) এবং জনাব মোছা: নুরুন্নাহার বেগম কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচিত হয়েছেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস